দুই আসনের উপ-নির্বাচনে হলফনামায় গড়মিল পাওয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলমের মনোনয়নপত্র বাতিল করেছেন বগুড়া জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম।
গত ৮ জানুয়ারি দুপুরে মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের দিনে এ আদেশ দেন তিনি। তবে আদেশের বিপরীতে হিরো আলম নির্বাচন কমিশনে আপিল করেন। গত রবিবার দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন থেকে হিরো আলমের মনোনয়নপত্র বাতিলের সিদ্ধান্ত বহাল রাখা হয়।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনে হিরো আলমের মনোনয়নপত্র বাতিলের বিরুদ্ধে করা আপিলের ওপর শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচন কমিশনে হাজির হয়ে হিরো আলম শুনানিতে অংশ নেন। এ সময় প্রার্থিতা ফেরতের বিষয়ে তাঁর পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী কাজী রেজাউল হোসেন যুক্তি তুলে ধরেন।
নির্বাচন কমিশনে তার মনোনয়নপত্র বাতিলের সিদ্ধান্তের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আজ সোমবার হাইকোর্টে সংশ্লিষ্ট শাখায় দুটি রিট করেছেন তিনি। তার আইনজীবী ইয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, মঙ্গলবার বিচারপতি মো. খসরুজ্জামান ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের বেঞ্চে রিটের শুনানি হতে পারে। রিটে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি), নির্বাচন কমিশনের সচিব, জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ চার জনকে বিবাদী করা হয়েছে।
এদিকে আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলম ফেসবুকে নিজের তৎপরতা নিয়ে দুটি ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, হাইকোর্ট একবার নির্বাচন কমিশনের এই নিয়ে চলছে আমার জীবন দৌঁড়ের ওপরে আছি। আগামীকাল হাইকোর্টের শুনানি।
বগুড়া-৬ (সদর) ও বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) দুটি আসন থেকেই সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন তিনি। কোনো আসন থেকে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করবেন না বলে জানিয়েছিলেন হিরো আলম। একাদশ জাতীয় নির্বাচনেও আলোচিত হিরো আলম বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী (সিংহ মার্কা) হয়েছিলেন। ওইসময় তিনি ৬৩৮ ভোট ভোট পান। এতে তার জামানত বাজেয়াপ্ত হয়। তবে ভোটের মাঝমাঠে গিয়ে অবশ্য তিনি নির্বাচন বর্জন করেন।
২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের প্রথম দিনেই হিরো আলমের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করা হয়। আপিল করলে নির্বাচন কমিশন শুনানির পর তা বাতিল করে। পরে উচ্চ আদালতের তার মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করা হয়। পরে তৎকালীন বগুড়ার রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক ফয়েজ আহাম্মদ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিরো আলমের হাতে পছন্দের ‘সিংহ’ প্রতীক তুলে দেন।
বগুড়া সদরের এরুলিয়া গ্রামের বাসিন্দা হিরো আলম শৈশবে চানাচুর বিক্রি করতেন। পরে তিনি সিডি বিক্রি এবং ডিশ সংযোগের ব্যবসা করেন। নিজেই মিউজিক ভিডিও তৈরি করে ডিশ লাইনে সম্প্রচার শুরু করেন। এভাবে হিরো আলমের তৈরি মিউজিক ভিডিও এবং ইউটিউব সিনেমা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে আলোচনায় আসেন।
প্রসঙ্গত, বিএনপির দলীয় সিদ্ধান্তে গত ১১ ডিসেম্বর বগুড়া-৬ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম মো. সিরাজ ও বগুড়া-৪ আসনের সংসদ সদস্য মোশারফ হোসেন স্পিকারের কাছে পদত্যাগ করেন। ফলে আসন দুটি শূন্য ঘোষণা করা হয়। পরবর্তীতে ১ ফেব্রুয়ারি ইভিএমে ভোট গ্রহণের জন্য তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী উপ-নির্বাচনে মনোনয়ন দাখিলের শেষ তারিখ ৫ জানুয়ারি। আগামী জানুয়ারি ১৫ জানুয়ারি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা যাবে।